Calcutta High Court – পশ্চিমবঙ্গের স্কুল শিক্ষকদের বেতন নিয়ে আদালতের বড় নির্দেশ। স্বস্তি ফিরলো শিক্ষকদের
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে মামলার খবর (Calcutta High Court) সবসময় শিরোনামে থাকে। কিছুদিন আগেও শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ ওঠে যার ফলস্বরূপ এখনো মামলা চলছে। তবে এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয় উঠে আসলো। এবার শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের জন্য শিক্ষকদের বেতন বন্ধ করে দেওয়ার বিরুদ্ধে রায় দিল কলকাতা হাইকোর্ট। এই রায়ের ফলে শিক্ষকদের অনেকটাই স্বস্তি হয়েছে।
Calcutta High Court Verdict on Teacher Salary
প্রসঙ্গত, এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওটা অভিযোগকে ঘিরে দীর্ঘদিন তার বেতন বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। সেই শিক্ষকের দাবি অনুযায়ী তিনি জানান স্কুলের খেলার মাঠে বেআইনিভাবে নির্মাণ কার্যে বাধা দিয়েছিলেন তিনি তাই তার নামে মিথ্যা অভিযোগ এনেছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। আর এই নিয়ে ঐ শিক্ষক কলকাতা হাইকোর্টের মামলা বা Calcutta High Court এ দায়ের করেন।
সেই মামলার বিচারপতি রাই চট্টোপাধ্যায় শিক্ষকের স্বপক্ষেই রায় ঘোষণা করেন এবং রাজ্য সরকার ও স্কুল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন ও শিক্ষককে অবিলম্বে স্কুলের শিক্ষকতা করতে দিতে হবে এবং বকেয়া বেতন সুদ সমেত মিটিয়ে দিতে হবে। জানা যাচ্ছে ২০১৭ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত এই কয় বছরের বেতন বন্ধ ছিল তাই এই কয় বছরের বেতন সুদ সমেত তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে এমনটাই নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্ট বা Calcutta High Court.
২০১২ সালের বীরভূমের তেতুলবেড়িয়া জুনিয়র হাই স্কুলে ইতিহাসের শিক্ষক রূপে যোগদান করেছিলেন সৌমেন্দ্রনাথ মিঞা। ২০১৬ সালে ওই স্কুলের টিচার ইনচার্জ এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। যদিও প্রথম দিকে সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল কিন্তু বিবাদের সূত্রপাত হয় যখন ২০১৬ সালে স্থানীয় তৃণমূল নেতা রাজারাম ঘোষ যিনি ওই স্কুলের পরিচালন কমিটির সভাপতি ছিলেন। তিনি ওই স্কুলেরই খেলার মাঠে একটি বেআইনের নির্মাণ কার্য শুরু করেন এবং ওই শিক্ষক কার্যে বাধা দিতে বিপত্তি বাড়ে।
অন্যান্য সদস্যরা তার ওপর অন্যান্য অভিযোগ আনে এবং থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তার ফলস্বরপ স্কুলে ঢুকলেই সেই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হবে এমনই হুমকি দিয়েছিলেন পুলিশ। ওই শিক্ষক আরো জানান, এরপর তিনি রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতরকে এই বিষয়টি জানান কিন্ত শিক্ষা দফতর কোনও পদক্ষেপ করেনি। স্থানীয় পুলিশও তাঁকে স্কুলে ঢুকতে সাহায্য করেনি বলে অভিযোগ। ওই শিক্ষকের আরও অভিযোগ, পরবর্তী সময়ে পদত্যাগ করার জন্য তাঁর উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়।
শেষে তিনি স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে পদত্যাগ পত্র পাঠিয়ে দেন। যদিও সেই পদত্যাগ পত্রের ভিত্তিতে স্কুল কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেননি যার জন্য তিনি পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নেন। শিক্ষা দফতরের কাছে তিনি আবেদন করেন, তাঁকে যেন স্কুলে যোগদান করানো হয়। ওই শিক্ষকের আইনজীবী আশিসকুমার চৌধুরী সোমবার আদালতে (Calcutta High Court) সওয়াল করে জানান, স্কুল কর্তৃপক্ষ কিছু না জানিয়ে বেতন বন্ধ করে দিতে পারেন না।
আরও পড়ুন, কপাল খুলতে চলেছে সরকারি কর্মীদের আবারো বাড়তে চলেছে ডিএ, অষ্টম বেতন কমিশন গঠনে।
এখন পর্যন্ত তাঁকে শোকজ বা সাসপেন্ড কিছুই করা হয়নি। এক জন স্কুল শিক্ষককে কিছু না জানিয়ে তাঁর বেতন বন্ধ করা সম্পূর্ণ নিয়মবিরুদ্ধ। স্কুল যে সব অভিযোগ এনেছিল, তার কোনও প্রমাণ নেই। তা ছাড়া, কোনও শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ (Calcutta High Court) এলে তখনই ব্যবস্থা না নিলে এবং তার পর তিন বছর কেটে গেলে, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আর কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। রাজ্য সরকার এবং স্কুল কর্তৃপক্ষ বেতন বন্ধ করে সাত বছর বসে থাকতে পারেন না।
এই সওয়ালের বিরুদ্ধে পাল্টা কোনও যুক্তি দিতে পারেননি রাজ্য সরকার এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের আইনজীবীরা। তার পরেই আদালত শিক্ষকের এই সাত বছরের বেতন সুদ সমেত ফেরত দেওয়ার এবং পুনরায় স্কুলে যোগদান করার নির্দেশ দিয়েছেন। এমন অন্যান্য কোথাও কোন শিক্ষকের সঙ্গে বেআইনিভাবে তার বেতন বন্ধ করে দেওয়া হলে আইন সবসময় সেই শিক্ষকের পক্ষেই রায় ঘোষণা করবেন এই আশ্বাস পেলেন সমস্ত শিক্ষকরা। এই রায় শুধু সেই শিক্ষক নয়, অন্যান্য আরো অনেক শিক্ষককে অনেকটাই স্বস্তি দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
Written by Shampa Debnath.