নতুন প্রকল্পে সমস্ত মেয়েদের ১ লাখ টাকা করে দিচ্ছে রাজ্য সরকার। কারা যোগ্য? কিভাবে আবেদন করবেন?

ভারত সরকার মহিলা ও কন্যাদের ক্ষমতায়নের জন্য বিভিন্ন রকম নতুন প্রকল্প (Government Scheme) চালু করেছে, যা আর্থিক সহায়তা, শিক্ষার সুযোগ এবং দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে তাদের জীবন উন্নত করছে। দিল্লির মহিলা সমৃদ্ধি যোজনা থেকে শুরু করে গুজরাটের ভালি দিকরি যোজনা (Vahali Dikri Yojana), এই প্রকল্পগুলো অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া মহিলা ও কন্যাদের জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে। এই প্রতিবেদনে আমরা জনপ্রিয় কিছু প্রকল্প, তাদের যোগ্যতার মানদণ্ড, সুবিধা এবং আবেদন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব।

১. মহিলা সমৃদ্ধি যোজনা: নতুন প্রকল্প চালু

মহিলা সমৃদ্ধি যোজনা দিল্লি সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ, যা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া মহিলাদের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। ২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ঘোষিত এই প্রকল্পটি যোগ্য মহিলাদের প্রতি মাসে ২,৫০০ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

মহিলা সমৃদ্ধি যোজনার যোগ্যতার মানদণ্ড

  • বয়স: ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হতে হবে।
  • বাসিন্দা: দিল্লির বাসিন্দা এবং নিবন্ধিত ভোটার হতে হবে।
  • আয়: বার্ষিক পারিবারিক আয় ৩ লাখ টাকার কম হতে হবে।
  • করদাতা: আবেদনকারী করদাতা বা সরকারি চাকরিজীবী হতে পারবেন না।
  • নথিপত্র: আধার-ভিত্তিক ই-কেওয়াইসি এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংযুক্তি বাধ্যতামূলক।

রিপোর্ট অনুযায়ী, দিল্লি সরকার এই প্রকল্পের জন্য ৫,১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে, যা দিল্লির প্রায় ১৫-২০ লাখ মহিলাকে সুবিধা দেবে। আবেদন প্রক্রিয়া সহজ করতে একটি অনলাইন পোর্টাল চালু করা হয়েছে।

মহিলা সমৃদ্ধি যোজনায় আবেদন পদ্ধতি

দিল্লি সরকারের অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। আধার, প্যান এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিবরণ জমা দিতে হবে। পোর্টালের উদ্বোধন এবং আবেদনের নির্দেশিকা সম্পর্কে দিল্লি সরকারের অফিসিয়াল ঘোষণার দিকে নজর রাখুন।

২. ভালি দিকরি যোজনা: গুজরাটের কন্যাদের সমর্থন

গুজরাটের ভালি দিকরি যোজনা (Vahali Dikri Yojana) কন্যাদের জন্ম ও শিক্ষাকে উৎসাহিত করার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য প্রকল্প। এটি কন্যাদের জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে শিক্ষা এবং লিঙ্গ বৈষম্য কমানোর লক্ষ্যে কাজ করে।

ভালি দিকরি যোজনার সুবিধা

  • প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির সময় ৪,০০০ টাকা
  • নবম শ্রেণিতে প্রবেশের সময় ৬,০০০ টাকা
  • ১৮ বছর বয়সে উচ্চশিক্ষা বা বিবাহের জন্য ১ লাখ টাকা

এই প্রকল্পটি বার্ষিক আয় ২ লাখ টাকার কম পরিবারের জন্য। এটি কন্যাদের শিক্ষাকে উৎসাহিত করছে এবং ঝরে পড়ার হার কমাচ্ছে।

যোগ্যতা ও আবেদন পদ্ধতি

Vahali Dikri Yojana প্রকল্পে আবেদনের জন্য আয়ের প্রমাণ, বাসিন্দার প্রমাণ এবং কন্যার জন্ম সনদ জমা দিতে হবে। আবেদন সাধারণত স্থানীয় সরকারি অফিস বা গুজরাট সরকারের অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে জমা দেওয়া যায়।

৩. অন্যান্য রাজ্যভিত্তিক প্রকল্প

দিল্লি ও গুজরাট ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন রাজ্য মহিলা ও কন্যাদের জন্য প্রকল্প চালু করেছে। এখানে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রকল্পের তথ্য দেওয়া হলো:

আরও পড়ুন, লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা বন্ধ? চিন্তায় বহু মহিলা

মুখ্যমন্ত্রী লাডলি বহনা যোজনা (মধ্যপ্রদেশ)

২০২৩ সালে চালু হওয়া এই প্রকল্পটি ২১-৬০ বছর বয়সী মহিলাদের প্রতি মাসে ১,২৫০ টাকা প্রদান করে, যাদের পারিবারিক আয় বছরে ২.৫ লাখ টাকার কম। এটি মহিলাদের আর্থিক স্বাধীনতা প্রচার করে।

মুখ্যমন্ত্রী মাঝি লাডকি বহিন যোজনা (মহারাষ্ট্র)

২০২৪ সালে চালু এই নতুন প্রকল্পটি ২১-৬৫ বছর বয়সী মহিলাদের প্রতি মাসে ১,৫০০ টাকা দেয়, যাদের পারিবারিক আয় ২.৫ লাখ টাকার কম। পুনর্নির্বাচিত হলে এই পরিমাণ ২,১০০ টাকায় বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী মাইয়া সম্মান যোজনা (ঝাড়খণ্ড)

২০২৪ সালে চালু এই প্রকল্পটি প্রায় ৫০ লাখ মহিলা (১৮-৫০ বছর) কে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে তাদের অর্থনৈতিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে।

প্রকল্পে আবেদন করতে এখানে ক্লিক করুন।

৪. এই প্রকল্পগুলো কেন গুরুত্বপূর্ণ?

মহিলা সমৃদ্ধি যোজনা এবং ভালি দিকরি যোজনার মতো প্রকল্পগুলো লিঙ্গ বৈষম্য এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো মহিলাদের শিক্ষা, ব্যবসা শুরু বা পরিবারের খরচ পরিচালনার জন্য সরাসরি আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। কন্যাদের জন্য এই প্রকল্পগুলো শিক্ষার সুযোগ এবং নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করে, যা বাল্যবিবাহ এবং স্কুল ঝরে পড়ার মতো সমস্যা কমায়।

মহিলা ক্ষমতায়নের ওপর প্রভাব

এই প্রকল্পগুলো শুধু আর্থিক সহায়তাই দেয় না, বরং মহিলাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং সমাজে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করে। শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন এবং আর্থিক স্বাধীনতার মাধ্যমে এগুলো ভারতের নারী সমাজকে আরও শক্তিশালী করছে।