একদিকে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের (Lakshmir Bhandar Scheme) মাধ্যমে বাংলার মহিলাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। অন্যদিকে মহার্ঘ ভাতা বঞ্চনার দাবিতে আদালতে মামলা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের লাখ লাখ সরকারি কর্মী। এক দিকে প্রতিমাসে আর্থিক সাহায্য পেয়ে মহিলারা স্বাবলম্বী হচ্ছেন, অন্যদিকে নিয়মিত সরকারি কাজ করেও ন্যায্য বেতন পাচ্ছেনা বলে প্রতিমাসে প্রচুর টাকা বঞ্চিত হচ্ছেন। তবে দীর্ঘ মামলার পর অবশেষে সম্প্রতি ২৫ শতাংশ ডিএ (Dearness Allowance) প্রদান করার নির্দেশ দিয়েছেন মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট। তবে রাজ্য সরকার পক্ষের আইনজীবী জানিয়েছেন এই বিপুল সংখ্যক টাকা দিলে রাজ্য সরকারের কোমর ভেঙ্গে যাবে। সমস্ত সরকারি প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাবে। তাই প্রশ্ন উঠছে, রাজ্যের আর্থিক হাল যখন এতোটাই খারাপ, তাহলে পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম জনপ্রিয় প্রকল্প লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা দেওয়া কি বন্ধ হয়ে যাবে?
১. লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প: একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
লক্ষ্মী ভান্ডার প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ, যার উদ্দেশ্য দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত মহিলাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা। প্রকল্পটির আওতায় প্রতি মাসে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়। এই প্রকল্পের জন্য কোটি কোটি মহিলা উপকৃত হচ্ছেন।
২. ২৫ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার নির্দেশ
সম্প্রতি আদালত রাজ্য সরকারকে ২৫ শতাংশ ডিএ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। যার ফলে লাখ লাখ সরকারি কর্মচারী বিপুল টাকা বকেয়া মহার্ঘ ভাতা পাবেন। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, এই ২৫ শতাংশ ডিএ বৃদ্ধি লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের জন্য আর্থিক চাপ তৈরি করতে পারে। কেননা, সরকারের ব্যয়ের পরিমাণ বেড়ে যাবে, যা প্রকল্পের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রভাব ফেলতে পারে।
আরও পড়ুন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নতুন প্রকল্পে 1000 টাকা পাবেন। যোগ্যতা ও আবেদন পদ্ধতি জেনে নিন
৩. লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকায় কাটছাট?
যেহেতু লক্ষ্মী ভান্ডার প্রকল্প একটি বড় সামাজিক সহায়তা প্রকল্প, এর অর্থায়ন অনেকটা রাজ্য সরকারের উপর নির্ভরশীল। ডিএ বৃদ্ধি রাজ্যের অর্থনৈতিক ভারসাম্যকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে, যার ফলে লক্ষ্মী ভান্ডার প্রকল্পে কোনও রকমের কাটছাট বা বিলম্ব ঘটতে পারে।
৪. বাজেটের উপর প্রভাব
রাজ্য সরকারের বাজেটে অতিরিক্ত ব্যয়ের চাপ সৃষ্টি হতে পারে, যা অন্যান্য সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই, লক্ষ্মী ভান্ডার প্রকল্পের জন্য বাজেট বরাদ্দ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা হওয়া প্রয়োজন।
৫. মহিলা ক্ষমতায়নের উপর প্রভাব
লক্ষ্মী ভান্ডার প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য হল মহিলাদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করা। যদি এই প্রকল্পের তহবিল কমে যায়, তবে তা মহিলাদের ক্ষমতায়নে একটি বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
৬. সমাধান: সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যয়নীতি
যতটা সম্ভব, সরকারকে তার ব্যয়নীতির মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে লক্ষ্মী ভান্ডার প্রকল্প চালিয়ে যেতে হবে। সরকারের উচিত ডিএ বাড়ানোর ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করা, যাতে এই প্রকল্পের আর্থিক সহায়তা বিরামবিহীনভাবে প্রদান করা যায়।
আরও পড়ুন, ব্যাংক একাউন্টে ১০০০০ টাকা দিচ্ছে কেন্দ্র সরকার। ভারতীয় নাগরিক হলেই পাবেন
৭. ভবিষ্যৎ কি?
এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের লক্ষ্য হওয়া উচিত, যাতে মহিলাদের জন্য লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প যেন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। ২৫ শতাংশ ডিএ প্রদানের ফলে রাজ্যের আর্থিক চাপ বেড়েছে, তবে সরকার যদি সঠিক ব্যয়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করে, তাহলে লক্ষ্মী ভান্ডার প্রকল্পের ভবিষ্যত আশাব্যঞ্জক থাকবে।
উপসংহার:
পশ্চিমবঙ্গের লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প মহিলাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সহায়তা, তবে ২৫ শতাংশ ডিএ প্রদান ও সরকারি কর্মীদের প্রাপ্য, যা শীর্ষ আদালত ঠিক করেছেন। এবার আদৌ এই ডিএ দেওয়ার জন্য লক্ষ্মী ভান্ডারের উপর প্রভাব পড়বে কিনা, সেই ব্যাপারে সরকারের তরফে কোনও ঘোষণা হয়নি। একাধিক সংবাদমাধ্যমে দেওয়া বিবৃতি থেকেই এই প্রতিবেদনটি করা। এখানে সেই সমস্ত সংবাদসুত্র লিংক দেওয়া হলো। সংবাদ সুত্র ১, সংবাদসুত্র ২.