Unclaimed Money – ব্যাঙ্কে পড়ে থাকা 42 হাজার কোটি বেনামী টাকা দেশবাসীকে বিলিয়ে দিচ্ছে। কীভাবে পাবেন?
দেশের রাষ্ট্রয়াত্ত ব্যাঙ্কে পড়ে রয়েছে কোটি কোটি দাবিহীন টাকা বা Unclaimed Money. কী হবে এতো পরিমাণ টাকা? কোথা থেকেই বা আসলো? চলুন জেনে নেওয়া যাক। ব্যাংকে প্রত্যেক মানুষ অর্থ সঞ্চয় করেন। ব্যাংক এমন এক বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান যেখানে কোনো মানুষ তার নিজের সঞ্চিত অর্থ নির্ভাবনায় রেখে দিতে পারেন। তবে জানেন কি দেশের সরকারি বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে দিনদিন বেড়েই চলেছে দাবিহীন অর্থের পরিমাণ। অর্থাৎ কোনও দাবিদার নেই এমন টাকার পরিমাণ রয়েছে ৪২ হাজার ২৭২ কোটি টাকা।
RBI Will Distributed 42k Crore Unclaimed Money
যদিও এই কথা শুনে আপনিও অবাক হবেন তবে এটাই সত্যি। এই বিপুল অর্থের মধ্যে ৬,০৮৭ কোটি টাকা বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলির (Unclaimed Money) কাছে জমা রয়েছে। আর বাকি সব সরকারি ব্যাংকে জমা রয়েছে। দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিতে ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের শেষে দাবি আমানত ছিল ১৭,৭৮৪ কোটি টাকা।
পরবর্তীকালে এই অর্থের পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পায়। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের একটি রিপোর্ট অনুসারে ২০২৩ সালের ৩১ মার্চ এই অর্থের পরিমাণ এসে দাঁড়ায় ৪২ হাজার ২৭২ কোটি টাকায়। দাবীদারহীন এই আমানতের পরিমাণ কত পাঁচ বছরে অনেক বেশি পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর এই অর্থের পরিমাণ ছিল ৩২ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকা। এক বছরে এই অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার নিয়ম অনুসারে যদি কোনো ব্যক্তি তার সেভিংস একাউন্টে জমা করা অর্থ মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার ১০ বছর পরেও টাকা না তোলে বা দাবি না জানায় তাহলে ঐ টাকা অর্থাৎ ফিক্সড ডিপোজিট অর্থ ‘আনক্লেমড ডিপোজ়িট’ বা Unclaimed Money বা দাবিহীন আমানতে পরিণত হয়। তখন সেই টাকা আর কেউ দাবি করতে পারেনা।
এই বিষয়গুলো শুধুমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি ব্যাঙ্ক ছাড়াও একাধিক বিদেশি ব্যাঙ্ক, গ্রামীণ ব্যাঙ্ক, সমবায় ব্যাঙ্কের এরকম Unclaimed Money বা দাবিহীন টাকার হিসেব রয়েছে দাবিহীন টাকার হিসাব রয়েছে রিজার্ভ ব্যাংকের কাছে। সূত্র অনুযায়ী জানা যাচ্ছে, দেশের সর্ববৃহৎ ব্যাংক স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ায় ১৯৯৯ সালে দাবিহীন টাকার পরিমান ছিল প্রায় ১৪৪.২৬ কোটি টাকা।
২০১৩ সালে এই পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে হয় ১,৪৬৯.৯৯ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে এসে এই টাকার পরিমান ২,১৫৬ কোটি টাকা হয়। আর ২০২০ সালে হয় ৩,৫৭৭ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে এস বি আই-এর হাতে এই দাবিদার হীন অর্থের পরিমাণ হয় ৮,০৮৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ ২ দশক মিলিয়ে এই Unclaimed Money বা দাবিহীন অর্থের পরিমাণ প্রায় ৫৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আবার ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে ২০০০ সালে দাবীহীন অর্থের পরিমাণ ছিল ৪০১.৯৪ কোটি টাকা। ২০১১ সালে এর পরিমাণ হয় ১৯৪৪.৫২ কোটি। আর ২০১৮ সালে তা হয় ৯,০১৯ কোটি। ২০২৩ সালে পুনরায় সেটি বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৩৫,০১২ কোটি টাকা। দুই দশকে ভারতের রাষ্ট্র ব্যাংক গুলিতে দাবিহীন অর্থ প্রায় ৯০গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে মানুষের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এই বিপুল অর্থের টাকার (Unclaimed Money) কোনো দাবিদার নেই কেনো? ব্যাংকিং সংস্থা বলছেন এই টাকার মালিক বা দাবিদার হয়তো অনেকে বেঁচে নেই কিংবা অন্য অন্য দেশে স্থানান্তর, পারিবারিক বিরোধ, আইনি জটিলতা ইত্যাদি কারণে টাকাগুলি ব্যাংক থেকে তোলা হয়নি ফলে সেইগুলি বহু বছর ধরে দাবিহীন অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
1 লাখ 30 হাজার টাকা পেতে এখনই আবেদন করুন কেন্দ্র সরকারের এই প্রকল্পে।
আবার এই কারণগুলি ছাড়া আরো একাধিক কারণও রয়েছে। এছাড়াও আর বি আই এর মতে গ্রাহকরা তাদের সেভিংস ও কারেন্ট একাউন্ট বন্ধ না করার কারণে সেখানে থাকা টাকা গুলি দাবি অবস্থায় পড়ে থাকে। আর এই অ্যাকাউন্টগুলি বন্ধ না করার কারণে এই Unclaimed Money বা দাবিহীন অর্থের পরিমাণ ক্রমশ বেড়েই চলেছে।
যেসব অ্যাকাউন্টের গ্রাহকরা মারা গেছেন তাদের নমিনি বা উত্তরাধিকারীরা সেই টাকার দাবি না করায় সেগুলিও জমেছে ব্যাংকে। প্রতিবছর দেশের প্রত্যেকটি ব্যাংক এই দাবীহীন অর্ধের পরিমাণ আরবিআই (RBI)-এর কাছে জমা করে আর প্রতিবছর এই অর্থের পরিমাণ বেড়ে যায়। জমা করার পর সেই আমানত ‘ডিপোজিটর এডুকেশন অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস ফান্ড স্কিম’ তহবিলে স্থানান্তরিত হয়।
এটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকে আরবিআই এর ওপর। গত বছরই অর্থ প্রতিমন্ত্রী ভগবৎ কে কারাদ বলেন, Unclaimed Money বা ‘দাবিহীন অর্থের অঙ্ক কমাতে এবং তা সঠিক দাবিদারের কাছে পৌঁছে দিতে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।’ বিগত কয়েক বছর ধরেই সরকারের তরফ থেকে এই বিষয়ে প্রচার অভিযান চালানো হচ্ছে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তাদের ওয়েবসাইটে এই Unclaimed Money বা দাবিহীন অর্থের অঙ্কের তালিকাও প্রকাশ করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তরফে বলা হয়েছে, এই টাকার যোগ্য উত্তরসূরি টাকার দাবি করলে তা যেন উপযুক্ত প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সঙ্গে উপযুক্ত সুদ ও প্রদান করা হবে।
ভোটের মুখে বাজারে আসছে, নতুন 100 টাকার নোট। আগের নোট বাতিল? কি করবেন?
আইনসম্মতভাবে এই Unclaimed Money অ্যাকাউন্টের মালিকের উত্তরসূরীর হাতে আমানত তুলে দেওয়ার জন্যই এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে যদি এক দশক বা তার বেশি সময় ধরে এইসব অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় পড়ে থাকে তাহলে এই টাকা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ডিপোজিটর এডুকেশন অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস ফান্ডে ট্রান্সফার করে দেওয়া হয়।
Written by Shampa Debnath.